একের পর এক জামিনে ছাড়া পাচ্ছেন কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা
১১-১১-২০২০ ইং
ব্যক্তিগত প্রতিবেদনঃ মোহাম্মদ রায়হান - Md Raihan
স্থানীয়রা বলছেন, এতদিন গোপনে চললেও আবার ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে এলো৷
যারা জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন তারা সবাই মাদক ও অস্ত্র আইনের চার্জশিটভুক্ত আসামি৷ ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন৷ আত্মসমর্পণের সময় তারা তিন লাখ পিস ইয়াবা এবং ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে৷ এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়৷ তাদের প্রত্যেককে অস্ত্র এবং মাদক আইনের দুইটি মামলায় আসামি করা হয় ৷ ২০ জানুয়ারি দুই মামলায় তাদের সবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় আদালতে৷ ১০২ জনের মধ্যে একজন আটক অবস্থায় মারা গেছেন৷
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে পাঁচজন জামিন পান৷ ৫ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান সাতজন৷ ওই একই আদালত থেকে ৩ নভেম্বর জামিন পান ১৫ জন৷ তাদের সবাইকে এরইমধ্যে মুক্তিও দেয়া হয়েছে৷ জামিনে মুক্ত সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির চার ভাই হলেন: আব্দুল শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল ইসলাম ও আব্দুল আমিন৷ সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি দাবি করেন, ‘‘তারা ছাড়া পাওয়ার পর আমি তাদের শপথ করিয়েছি তারা আর ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত হবে না৷ তারা ব্যবসা বাণিজ্য বা রাজনীতি করবে৷ শুধু আমার ভাইয়েরা কেন এই অঞ্চলের বাকি যারা আছে তারাও জামিনে বেরিয়ে আসবে৷’’
গত বছর সারাদেশে বিশেষ করে কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর এরা আত্মসমর্পণ করেন৷ ইয়াবা ব্যবসায় আলোচিত বদিই এই আত্মসমর্পণের আয়োজন করেন বলে কথা আছে৷ যদিও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তাকে রাখা হয়নি৷ সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বদির স্ত্রী সংসদ সদস্য শাহীন আকতার উপস্থিত ছিলেন৷
টেকনাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর দাবি করেন, ‘‘বাকি যারা কারাগারে আছেন তাদের জামিনের তদবিরও চলছে৷ আর বদি নিজে তার ভাইসহ অন্যদের জামিনের জন্য তৎপর ছিলেন৷
যারা কারাগারের বাইরে ছিলেন তারা সবাই আত্মসমর্পণকারীদের সিন্ডিকেটেরই সদস্য৷ ফলে কারাগারে বসেও তারা তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিচালনা করেছেন৷ এখন তারা বাইরে আসায় ইয়াবা ব্যবসা আরো বেড়ে যাবে৷ অভিযানের সময় তাদের ক্রসফয়ার থেকে বাঁচাতেই বদি আত্মমসর্পণ করিয়ে তাদের কারাগারে পাঠান৷ এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তাদের জামিনে বের করে আনছেন৷’’
অবশ্য বদি দাবি করেন, ‘‘তারা ভালো হওয়ার জন্যই তো আত্মসমর্পণ করেছে৷ ১৮ মাস বিনা বিচারে কারাগারে ছিল৷ আর কত? বিনা বিচারে কত দিন কারাগারে থাকবে? এখন যদি তারা বের হয়ে আবার ইয়াবা ব্যবসা করে তাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হোক৷’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম তালিকায় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে তার নিজের নাম জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি কক্সবাজারের চারবারের শ্রেষ্ঠ করদাতা৷ এই এলাকায় আমিই সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ তাই আমার নামে অপপ্রচার করা হয়৷’’ তার দাবি কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গারা৷
ইয়ারা ব্যবসায়ীরা জমিন পাওয়ায় কক্সবাজার জেলা পুলিশকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন৷ তারা যাতে নতুন করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়াতে না পারে সেদিকে নজর রাখাতে বলা হয়েছে৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘জামিন পাওয়া যে কারোর অধিকার৷ আর আদালত জামিন দিলে আমাদের তো কিছু করার নেই৷ তাদের তো কোনো শাস্তি হয়নি৷ মামলা যা আছে চলবে৷ তারা আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে আবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে পাওয়া যায়নি৷
Comments
Post a Comment